সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

মার্চ, ২০২০ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

কমলা ফুলি

- সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত কমলা ফুলি, কমলা ফুলি কমলা লেবুর ফুল, কমলা ফুলির বিয়ে হবে কানে মোতির দুল। কমলা ফুলির বিয়ে দেখতে যাবে, ফলার খাবে চন্দনা আর টিয়ে। কোথায় থাক কমলা ফুলি সিলেট আমার ঘর, টিয়ে বলে দেখতে যাব পাখায় দিয়ে ভর।

উমর ফারুক

-- কাজী নজরুল ইসলাম তিমির রাত্রি - 'এশা'র আযান শুনি দূর মসজিদে। প্রিয়-হারা কার কান্নার মতো এ-বুকে আসিয়ে বিঁধে! আমির-উল-মুমেনিন, তোমার স্মৃতি যে আযানের ধ্বনি জানে না মুয়াজ্জিন। তকবির শুনি, শয্যা ছাড়িয়া চকিতে উঠিয়া বসি, বাতায়নে চাই-উঠিয়াছে কি-রে গগনে মরুর শশী? ও-আযান, ও কি পাপিয়ার ডাক, ও কি চকোরীর গান? মুয়াজ্জিনের কন্ঠে ও কি ও তোমারি সে আহ্ববান? আবার লুটায়ে পড়ি। 'সেদিন গিয়াছে' - শিয়রের কাছে কহিছে কালের ঘড়ি। উমর! ফারুক! আখেরি নবীর ওগো দক্ষিণ-বাহু! আহ্বান নয় - রূপ ধরে এস - গ্রাসে অন্ধতা-রাহু! ইসলাম-রবি, জ্যোতি তার আজ দিনে দিনে বিমলিন! সত্যের আলো নিভিয়া-জ্বলিছে জোনাকির আলো ক্ষীণ। শুধু অঙ্গুলি-হেলনে শাসন করিতে এ জগতের দিয়াছিলে ফেলি মুহম্মদের চরণে যে-শমশের ফিরদৌস ছাড়ি নেমে এস তুমি সেই শমশের ধরি আর একবার লোহিত-সাগরে লালে-লাল হয়ে মরি! ইসলাম - সে তো পরশ-মানিক তাকে কে পেয়েছে খুঁজি? পরশে তাহার সোনা হল যারা তাদেরেই মোরা বুঝি। আজ বুঝি - কেন বলিয়াছিলেন শেষ পয়গম্বর- 'মোরপরে যদি নবী হত কেউ, হত সে এক উমর।' অর্ধ পৃথিবী করেছ শাসন ধুলার তখতে বসি খেজু...

আম পাতা জোড়া-জোড়া

আম পাতা জোড়া-জোড়া, মারবো চাবুক চড়বো ঘোড়া। ওরে বুবু সরে দাঁড়া, আসছে আমার পাগলা ঘোড়া। পাগলা ঘোড়া ক্ষেপেছে, চাবুক ছুঁড়ে মেরেছে।

কানা বগীর ছা

-খান মুহাম্মদ মইনুদ্দীন ঐ দেখা যায় তাল গাছ ঐ আমাদের গাঁ। ঐ খানেতে বাস করে কানা বগীর ছা। ও বগী তুই খাস কি? পানতা ভাত চাস কি? পানতা আমি খাই না পুঁটি মাছ পাই না। একটা যদি পাই অমনি ধরে গাপুস গুপুস খাই।

আমাদের ছোট নদী

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে। পার হয়ে যায় গোরু, পার হয় গাড়ি, দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি। চিক্ চিক্ করে বালি, কোথা নাই কাদা, একধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা। কিচিমিচি করে সেথা শালিকের ঝাঁক, রাতে ওঠে থেকে থেকে শেয়ালের হাঁক। আর-পারে আমবন তালবন চলে, গাঁয়ের বামুন পাড়া তারি ছায়াতলে। তীরে তীরে ছেলে মেয়ে নাইবার কালে গামছায় জল ভরি গায়ে তারা ঢালে। সকালে বিকালে কভু নাওয়া হলে পরে আঁচল ছাঁকিয়া তারা ছোটো মাছ ধরে। বালি দিয়ে মাজে থালা, ঘটিগুলি মাজে, বধূরা কাপড় কেচে যায় গৃহকাজে। আষাঢ়ে বাদল নামে, নদী ভর ভর মাতিয়া ছুটিয়া চলে ধারা খরতর। মহাবেগে কলকল কোলাহল ওঠে, ঘোলা জলে পাকগুলি ঘুরে ঘুরে ছোটে। দুই কূলে বনে বনে পড়ে যায় সাড়া, বরষার উৎসবে জেগে ওঠে পাড়া।

দুরন্ত আশা

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মর্মে যবে মত্ত আশা সর্পসম ফোঁষে অদৃষ্টের বন্ধনেতে দাপিয়া বৃথা রোষে তখনো ভালোমানুষ সেজে বাঁধানো হুঁকা যতনে মেজে মলিন তাস সজোরে ভেঁজে খেলিতে হবে কষে! অন্নপায়ী বঙ্গবাসী স্তন্যপায়ী জীব জন-দশেকে জটলা করি তক্তপোষে ব’সে। ভদ্র মোরা, শান্ত বড়ো, পোষ-মানা এ প্রাণ বোতাম-আঁটা জামার নীচে শান্তিতে শয়ান। দেখা হলেই মিষ্ট অতি মুখের ভাব শিষ্ট অতি, অসল দেহ ক্লিষ্টগতি– গৃহের প্রতি টান। তৈল-ঢালা স্নিগ্ধ তনু নিদ্রারসে ভরা, মাথায় ছোটো বহরে বড়ো বাঙালি সন্তান। ইহার চেয়ে হতেম যদি আরব বেদুয়িন! চরণতলে বিশাল মরু দিগন্তে বিলীন। ছুটেছে ঘোড়া, উড়েছে বালি, জীবনস্রোত আকাশে ঢালি হৃদয়তলে বহ্নি জ্বালি চলেছি নিশিদিন। বর্শা হাতে, ভর্‌সা প্রাণে, সদাই নিরুদ্দেশ মরুর ঝড় যেমন বহে সকল বাধাহীন। বিপদ-মাঝে ঝাঁপায়ে প’ড়ে শোণিত উঠে ফুটে, সকল দেহে সকল মনে জীবন জেগে উঠে– অন্ধকারে সূর্যালোতে সন্তরিয়া মৃত্যুস্রোতে নৃত্যময় চিত্ত হতে মত্ত হাসি টুটে। বিশ্বমাঝে মহান যাহা সঙ্গী পরানের, ঝঞ্ঝামাঝে ধায় সে প্রা...

পাছে লোকে কিছু বলে

-কামিনী রায় করিতে পারি না কাজ               সদা ভয় সদা লাজ সংশয়ে সংকল্প সদা টলে,-               পাছে লোকে কিছু বলে। আড়ালে আড়ালে থাকি               নীরবে আপনা ঢাকি, সম্মুখে চরণ নাহি চলে               পাছে লোকে কিছু বলে। হৃদয়ে বুদবুদ মত               উঠে শুভ্র চিন্তা কত, মিশে যায় হৃদয়ের তলে,               পাছে লোকে কিছু বলে। কাঁদে প্রাণ যবে আঁখি               সযতনে শুষ্ক রাখি;- নিরমল নয়নের জলে,               পাছে লোকে কিছু বলে। একটি স্নেহের কথা      ...

চাঁদ মামা

আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা, চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা । ধান ভানলে কুঁড়ো দেব মাছ কুটলে মুড়ো দেব, কালো গাইয়ের দুধ দেব, দুধ খাওয়ার বাটি  দেব  চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা ।

পণ্ডশ্রম

– শামসুর রাহমান এই নিয়েছে ঐ নিল যাঃ! কান নিয়েছে চিলে, চিলের পিছে মরছি ঘুরে আমরা সবাই মিলে। কানের খোঁজে ছুটছি মাঠে, কাটছি সাঁতার বিলে, আকাশ থেকে চিলটাকে আজ ফেলব পেড়ে ঢিলে। দিন-দুপুরে জ্যান্ত আহা, কানটা গেল উড়ে, কান না পেলে চার দেয়ালে মরব মাথা খুঁড়ে। কান গেলে আর মুখের পাড়ায় থাকল কি-হে বল? কানের শোকে আজকে সবাই মিটিং করি চল। যাচ্ছে, গেল সবই গেল, জাত মেরেছে চিলে, পাঁজি চিলের ভূত ছাড়াব লাথি-জুতো কিলে। সুধী সমাজ! শুনুন বলি, এই রেখেছি বাজি, যে-জন সাধের কান নিয়েছে জান নেব তার আজই। মিটিং হল ফিটিং হল, কান মেলে না তবু, ডানে-বাঁয়ে ছুটে বেড়াই মেলান যদি প্রভু! ছুটতে দেখে ছোট ছেলে বলল, কেন মিছে কানের খোঁজে মরছ ঘুরে সোনার চিলের পিছে? নেইকো খালে, নেইকো বিলে, নেইকো মাঠে গাছে; কান যেখানে ছিল আগে সেখানটাতেই আছে। ঠিক বলেছে, চিল তবে কি নয়কো কানের যম? বৃথাই মাথার ঘাম ফেলেছি, পণ্ড হল শ্রম।

হারাধনের দশটি ছেলে

-যোগীন্দ্রনাথ সরকার হারাধনের দশটি ছেলে ঘোরে পাড়াময়, একটি কোথা হারিয়ে গেল রইল বাকি নয়। হারাধনের নয়টি ছেলে কাটতে গেল কাঠ, একটি কেটে দু’খান হল রইল বাকি আট। হারাধনের আটটি ছেলে বসলো খেতে ভাত, একটির পেট ফেটে গেল রইল বাকি সাত। হারাধনের সাতটি ছেলে গেল জলাশয়, একটি সেথা ডুবে ম’ল রইল বাকি ছয়। হারাধনের ছয়টি ছেলে চ’ড়তে গেল গাছ, একটি ম’ল পিছলে পড়ে রইল বাকি পাঁচ। হারাধনের পাঁচটি ছেলে গেল বনের ধার, একটি গেল বাঘের পেটে রইল বাকি চার। হারাধনের চারটি ছেলে নাচে ধিন ধিন, একটি ম’ল আছাড় খেয়ে রইল বাকি তিন। হারাধনের তিনটি ছেলে ধরতে গেল রুই, একটি খেলো বোয়াল মাছে রইল বাকি দুই। হারাধনের দুইটি ছেলে মারতে গেল ভেক, একটি ম’ল সাপের বিষে রইল বাকি এক। হারাধনের একটি ছেলে কাঁদে ভেউ ভেউ, মনের দুঃখে বনে গেল রইল না আর কেউ।

আদর্শ ছেলে

– কুসুম কুমারী দাশ আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে? মুখে হাসি বুকে বল, তেজে ভরা মন ‘মানুষ হইতে হবে’ – এই যার পণ৷ বিপদ আসিলে কাছে হও আগুয়ান নাই কি শরীরে তব রক্ত, মাংস, প্রাণ? হাত পা সবারই আছে, মিছে কেন ভয়? চেতনা রয়েছে যার, সে কি পড়ে রয়? সে ছেলে কে চায় বল, কথায় কথায় আসে যার চোখেজল, মাথা ঘুরে যায়? মনে প্রাণে খাট সবে, শক্তি কর দান, তোমরা ‘মানুষ’ হলে দেশের কল্যাণ৷

অধম ও উত্তম

– সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত কুকুর আসিয়া এমন কামড় দিল পথিকের পায় কামড়ের চোটে বিষদাঁত ফুটে বিষ লেগে গেল তায়। ঘরে ফিরে এসে রাত্রে বেচারা বিষম ব্যথায় জাগে, মেয়েটি তাহার তারি সাথে হায় জাগে শিয়রের আগে। বাপেরে সে বলে ভর্ৎসনা-ছলে কপালে রাখিয়া হাত, “তুমি কেন বাবা, ছেড়ে দিলে তারে তোমার কি নেই দাঁত !” কষ্টে হাসিয়া আর্ত কহিল “তুই রে হাসালি মোরে, দাঁত আছে বলে কুকুরের পায় দংশি কেমন করে ! কুকুরের কাজ কুকুর করেছে কামড় দিয়েছে পায়, তা ব’লে কুকুরে কামড়ানো কি রে মানুষের শোভা পায় ?”

কাজের লোক

-নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্য মৌমাছি, মৌমাছি, কোথা যাও নাচি নাচি দাঁড়াও না একবার ভাই। ওই ফুল ফোটে বনে, যাই মধু আহরণে দাঁড়াবার সময় তো নাই। ছোট পাখি, ছোট পাখি, কিচি-মিচি ডাকি ডাকি কোথা যাও বলে যাও শুনি? এখন না ক’ব কথা, আনিয়াছি তৃণলতা, আপনার বাসা আগে বুনি। পিপীলিকা, পিপীলিকা, দল-বল ছাড়ি একা কোথা যাও, যাও ভাই বলি। শীতের সঞ্চয় চাই, খাদ্য খুঁজিতেছি তাই ছয় পায়ে পিল পিল চলি।

ছুটি

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মেঘেরে কোলে রোদ হেসেছে বাদল গেছে টুটি, আজ আমাদের ছুটি ও ভাই আজ আমাদের ছুটি। কী করি আজ ভেবে না পাই পথ হারিয়ে কোন বনে যাই, কোন মাঠে যে ছুটে বেড়াই সকল ছেলে জুটি, আজ আমাদের ছুটি ও ভাই আজ আমাদের ছুটি।

কিছু কথা

কিছু বাংলা ছড়া ও কবিতা কে এক জায়গায় রাখার একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। এ ব্লগে পোষ্ট করা সবগুলো ছড়া ও কবিতা সংগৃহীত।